|  | 
| চুরি হওয়া ছবি পুলিশের হাতে। | 
সুভাষ মন্ডল , কোচবিহার ঃ ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের নিরিক্ষনে থাকা কোচবিহারের রাজমাতা তথা জয়পুরের মহারানী গায়েত্রী দেবীর ছবি রাজবাড়ির ভেতর থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা ছারাও একজনকে গ্রেপ্তার করল কোচবিহার পুলিশ । রাজবাড়ির ভেতর থেকে রাতের বেলায় গায়েত্রী দেবীর ছবি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাতেই কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয় । রাজমাতা তথা জয়পুরের রাজরানী গায়েত্রী দেবীর ছবি চুরি যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত নামেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে স্বয়ং । রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে সাংবাদিকদের জানান গায়েত্রী দেবীর ছবি চুরি যাওয়ার ঘটনায় শনিবার রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ আশে । তদন্তে নেমে কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি নতুন পল্লী এলাকার বছর কুড়ির মংলু দাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ছবিটি বলে পুলিশ সুপার জানান । অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার মূল পান্ডাকে গ্রেপ্তার করা ছারাও ছবি উদ্ধারের ঘটনায় ব্যপক আলোড়ন পড়ে । উল্লেখ্য শনিবার রাজবাড়ির কর্মীরা দেখাতে পান , সিড়ির কাছে লাগানো গায়েত্রী দেবীর ছবিটি নেই। এর পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে।সারাদিন ছবিটির খোজ চলে রাজবাড়িতে, অবশেষে তদন্ত শুরু করে কোতয়ালী থানার পুলিশ । রাজ প্রসাদের দুই কর্মীকে আটক করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য । পরে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয় । রবিবার ভোর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মংলু দাসের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ । তাঁর কাছ থেকেই উদ্ধার হয় ছবিটি । জেলার পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে সাংবাদিকদের বলেন নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ছবিটি ওই যুবক নিয়ে গেল তা তদন্ত হচ্ছে । রাজবাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো আটো সাটো করার জন্য রাজবাড়ির দায়িত্বে থাকা আর্কিলোজিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলে হবে বলেও জেলার পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে জানান । রাজবাড়ির ভেতর থেকে রাতের বেলায় গায়েত্রী দেবীর ছবি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় একই সাথে রাজবাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে । গার্ড, পুলিশ, ক্যামেরা এরিয়ে ঘেরা থাকা স্বত্বেও কিভাবে ছবিটি নিয়ে জাওয়া সম্ভব হল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । সূত্রের জানা গেছে রাজবাড়িতে কর্মিদের বেতন নেই প্রায় ৩ মাস । প্রায় তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ার কারনেই একাধিক কর্মী আসছেন না কাজে । একই সাথে রাজবাড়ির ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে ৩৩ টি ক্যামেরা আছে যার মধ্যে মাত্র ৫ টি ক্যামেড়াই কাজ করছে, বাকি গুলি অচল হয়ে পড়ে আছে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে । সন্ধ্যার পরে রাজবাড়ির সুরক্ষা কর্মী রা বেশির ভাগ ই বেড়তে ভয় পান বলেও জানা গেছে, সব মিলিয়ে এটা চোরেদের আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে বলে অনেকের অভিমত । বলা বাহুল্য এর আগেও এই ছবিটি চুড়ি হয়েছিল, তা পাওয়াও গেছে। জেলার পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে বলেন ধৃত মংলু দাস কোনো কাজ ই করেন না । মংলু দাসের বয়ান অনুসারে সে ছবি আকার জন্য নিয়ে গিয়েছিল এই ছবিটি ।এদিন জেলার পুলিশ সুপার ডঃ ভোলানাথ পান্ডে আরো বলেন, রাজবাড়ির সুরক্ষ্যা নিয়ে দ্রুত বৈঠকে বসবে জেলা পুলিশ । জেলা প্রশাসন কে সাথে নিয়ে এই বৌঠক করা হবে । সেখানে রাজবাড়ির সুরক্ষা নিয়ে একাধিক ফাক ফোকড় গুলি কে ভরাট করার ব্যপারে আলোচনা হবে। রাজবাড়ির ভেতরে থাকা পুলিশ পিকেটে রক্ষী সংখ্যা বাড়ানোর ব্যপারেও আলোচনা করা হচ্ছে ।রাজবাড়ি নিয়ে একাধিক অভিযোগ আগেই উঠেছিল। রাজবাড়ি তে প্রচুর শ্রমিক কাজ করে তাদের নীয়ন্ত্রন নিয়ে ও অভিযোগ আছে । তাছাড়া এই ঘটনার সাথে রাজবাড়ির কেউ যুক্ত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান জেলা পুলিশ সুপার । রাজবাড়ির ভেতর থেকে রাজমাতা তথা জয়পুরের রাজরানী গায়েত্রী দেবীর ছবি চুরি যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ জ্যোতি মজুমদার , হেরিটেজ সোসাইটির দিনহাটা শাখার সম্পাদক শঙ্খনাদ আচার্য প্রমূখ বলেন এই ছবিটি খুবই সাধারন মানের একটি ছবি । এটিকে ফ্লেক্স এর ওপরে প্রিন্ট করিয়ে বাধাই করানো হয়েছিল ।এই ছবিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তেমন না থাকলেও রাজবাড়ি থেকে সকলের আড়ালে ছবি উধাওটাই গুরুত্বপূর্ন । ১৯৯৪ এ এভাবেই কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুর চুড়ি হয়েছিল যা আজও উদ্ধার হয় নি। সাধারন ছবি চুড়ি হয়েছে এর আড়ালে অ্যান্টিক ছবি ও চুড়ি যেতে পারে । তাই সোসাইটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই আর্কিলোজিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়া কে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ জ্যোতি মজুমদার , হেরিটেজ সোসাইটির দিনহাটা শাখার সম্পাদক শঙ্খনাদ আচার্য উল্লেখ করেন ।


 
 
 
 
 
